আলো আঁধার আর পূজা

আলো আঁধার আর পূজা
স্নেহা উথ্থাশিনী (প্রথম সেমেস্টার, ২০২৩) 

শ্যামপুকুর বস্তির রমেশ মাহাতোর মেয়েটার গায়ের রং কালো বলে, স্কুল কলেজের কত্ত ছেলে ক্যালী, কেলেন্দি বলে ডেকেছে! আজ দুমাস হলো, মেয়েটা বিডিও হয়ে এসেছে, শ্যামপুকুর ব্লকে। আজ তার নতুন কেনা দোতালা বাড়িটায় আলোর রোশনাই, দীপাবলি বলে কথা.....

দত্ত বাবুর বড়ো মেয়েকে, বিয়ের আগের দিন পাত্রপক্ষ যখন জানালো মেয়ের গায়ের রং বেশ চাপা তাই তারা এ বিয়েতে রাজী নয়, দত্ত বাবুর মেয়েটা সেদিন একটুও কাঁদেনি! নিজের সাথে লড়ে সে আজ একটা নতুন বুটিক খুলেছে, এই দীপাবলিতে তার উদ্বোধন!

রুবী হাসপাতালের হেড নার্স, সেফালী দিদিকে ওর বয়ফ্রেন্ড যখন দুবছর ব্যবহার করে বলেছিল, 'আয়নায় মুখখানা দেখেছো, কি করে ভাবলে আমি তোমায় বিয়ে করব!' সেদিন ঘোর দীপাবলীর সন্ধ্যেয় এক প্রগাঢ় অন্ধকার নেমে এসেছিল সেফালীদির জীবনে। আজ ইমারজেন্সী বিভাগে বাইক এক্সিডেন্টের ছেলেটা যখন যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে, মুখটা দেখে চিনতে পারল সেফালী দি! আজ চারিদিকে কতো আলোর রোশনাই...

বনগা লোকালের ফাঁকা কমপার্টমেন্টে এমনি এক দীপাবলির রাতে ধর্ষিত হলো নৈহাটীর মেয়েটা, ছজন মিলে এলোপাথাড়ী ধর্ষন করেছিল মেয়েটাকে! সেদিনের দীপাবলির রাতের মতো এতো গাঢ় অন্ধকার এই পৃথিবীর বুকে আর একটাও নেমে আসেনি। আজ আরেক দীপাবলি, মেয়েটা সে যাত্রায় বেঁচে গেছিল, আজ মেয়েটা তার অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়েছি ঠাকুর দেখতে! কত আলো তার জীবনে...

জন্ম থেকে খুব কালো রঙ পেয়েছিল বলে মেয়েটার নাম রেখেছিল শ্যামা! ওটা কি ঠিক দেখাচ্ছে? টিভিতে নীটের রেজাল্ট বেরিয়েছে, শ্যামা পাল, এ আই আর ১৩৪।

মজুমদার বাড়ির মেয়েটা, উশসী মজুমদার, কালো বলে কতো কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তার ইয়েত্তা নেই, কিছুদিন আগে মিস ওয়ার্ল্ড এর অডিশনে সিলেক্ট হয়েছে। আজ তার বাড়িতে ধুমধাম করে কালী পুজো হচ্ছে!

এরম অগনতি উদাহরণের পাহাড় ডিঙিয়ে দীপাবলি আসে! প্রতিবছর! শ্যামা মা নিজে পূজিত হন! তার কালো রূপের জৌলুশে আলো হয়ে নেমে আসে মায়া! আমাদের চারপাশের শত শত অন্ধকারকে তিনি নিজের হাতেই আলোর পথ দেখান। তাদের যাত্রাপথকে আলোময় করে তোলে! লড়াইয়ের স্পর্ধা জোগায়, সাহসও। দীপাবলি আলোর উৎসব! আলোর মেলা। মায়ের রূপ মায়াবী হয়ে ঝরে পড়ে! আর আমাদের জীবনের সমস্ত অন্ধকার দূর হয় মায়ের আশীর্বাদে।

মনের অন্ধকার দূর হওয়াই দীপাবলি! আর তাঁর উদযাপনই হলো, 'উৎসব'।

প্রতিটা দীপাবলি তাই বলে যায়,

"চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে,

অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহি রে!"

মা আছেন। সমস্ত অন্ধকারে, বিপদে, নিজের হাতে লালন করে আগলে রাখেন মা। আর তার আলোয় আমরা মেতে উঠি দিনযাপনে; দীপাবলি ভালো

কাটুক! অন্তরের সমস্ত ক্লেদ, অন্ধকার মুছে যাক!আলো হোক! ভালো হোক!

Comments

Popular posts from this blog

Tarak Chandra Das: the worst sufferer of academic amnesia in Indian Anthropology

Public anthropology in practice

National colloquium on "Metamorphoses of the Political: Voices from the Margins of West Bengal"