এ কেমন রঙ খেলা?
এ কেমন রঙ খেলা?
bySneha Utthasini (sem I, 2023)
বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন আর এই ১৩ পার্বনের
মধ্যে একটি অন্যতম পার্বন হলো দোল যাত্রা (হোলি), ঠাকুর দাদায় মুখে শুনেছিলাম সেকালে দোল যাত্রা' মানে একটা বিরাট ব্যাপার, আমাদের বাড়ি থেকে নাকি রাধা-কৃষ্ণ-এর মূর্তি নিয়ে যেতো প্রত্যেক বছর এই দোল যাত্রার সময়, ঠাকুর দাদার মুখে শুনেছি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রঙে কালো ছিল তাই তিনি একদিন তার মা কে রাগে, অভিমানে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- " মাতা আমার গায়ের বর্ণ কেন কালো? রাধা বা অন্যান্য গোপীনীদের গায়ের বর্ণের মতো পরিস্কার নয় কেন ? তখন নাকি শ্রীকৃষ্ণের মা রাধা সহ বাকি দের গায়ে বিভিন্ন রঙের রঙ মাখিয়ে দিয়ে ছিলেন তারা মহানন্দে সারা দিন রঙ মাখছিলেন তাই সনাতন ধর্মে ওই দিন থেকে বছরে একবার রঙ খেলা হয়, ঠাকুরদাদা আরো বলেছিলেন তখনকার হোলি খেলা আর এখনকার হোলি খেলার মধ্যে অনেক বিস্তর ফারাক আছে, আমরা নাকি বিশৃঙ্খলিত ভাবে রঙ খেলি, আমাদের রঙ খেলার মানে নাকি অম্লীলতা।এবার এই ৮৮ বছরের বৃদ্ধা কে, কে বোঝাবে যে, সে কোন যুগে আছে ? আজ আরেক হোলি, মন-মেজাজ খুব খুশি । কিছু ব্যান্ডি আছেন যারা রঙ মাখতে একদমই পছন্দ করেনা বাড়িতেই বসে থাকে ওই দিন ।হয়তো তাদের মতো ব্যক্তিদের জন্যই বিম্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনই কোনো এক বসন্তের সময় বারান্দায় বসে গান বেঁধেছিলেন-
"ওরে গৃহবাসী
খোল, দ্বার খোল, লাগল যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।"
আজ আরেক হোলি উৎসব, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাজারে চলে যাই রঙ কেনার উদ্দেশ্যে, দোকানদার বলে, "এই যে ম্যাডাম এই দেখুন একদম pure organic colours আছে" আমি তো অবাক!!! কি!!! Organic? সে তো class 11 and 12 এ Chemistry তে পড়েছিলাম ongonic-inorganic। দোকান দার তো চরম খেপে গিয়ে বলে, "বেশি ন্যাকামো করবেন না তো, এই organic মানে হচ্ছে এই রঙে কোনো ভেজাল নেই আপনার Skin-এ কোনো অ্যালার্জি হবে না, নিয়ে যান," আমি ভাবলাম রঙে ভেজাল ? এটা হয় কি করে ? যাই হোক ওই organic colours কিনে বাড়ি আসার পথে আমার এক কাকুর সঙ্গে আমার দেখা হতেই সে জিজ্ঞাসা করলো, কিরে কি রঙ কিনলি ? আমি উত্তরে বলি, "এই যে দেখো কাকু pure organic colour... গোলাপী, কমলা, সবুজ, নীল," আমার কথা শুনে কাকু খেঁচিয়ে বলে উঠল, "হ্যারে আর রঙ পেলি না তুই? সবুজ রঙ টাই কিনতে হলো তোকে? জানিস না সবুজ রং মুসলমানদের প্রতীক? কাকুর মুখে এই সব শুনে মনে মনে ভাবলাম হয়তো এই রকম মানসিকতার ব্যক্তিদের জন্যই বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলাম দু কলম লিখে দিয়েছিলেন-
মোরা এক বৃন্তে দু'টি কুসুম হিন্দু- মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।
রঙ তো রঙই হয়।এর আবার ধর্ম হয় নাকি? কাকুর কথার পাত্তা না দিয়ে বাড়ির দিকে চললাম, ঠিক একটু পরেই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান সবাই কে জিজ্ঞাসা করছে- "কিগো তোমরা কেউ বিরোধী পার্টির রঙ কেনোনি তো, ওটা কিন্তু আমাদের পার্টির রঙ নয়, যদি কেনো তাহলে ফেরত দিয়ে আমাদের পার্টির রঙ কেনো, মাখো, আনন্দ করো ।। এতক্ষন রঙ নিয়ে ধর্ম ভেদাভেদ হচ্ছিল এবার এলো পার্টি? আমি এইসব avoid করে বাড়ি ফিরলাম, মা বলে যা রঙ খেলার দুপুর 12 টার মধ্যে খেলা শেষ করে স্নান করে বাড়িতেই থাকো বাইরে বেরোবে না, আজকের দিন টা ভালো নয়। মা এই সব কি বলছে? আজ হোলি এত পবিত্র দিন। এই দিন কে খারাপ বলছে মা? আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মা বলল "আজ কে সব চ্যাংরা ছেলেমেয়ে দের দল মদ খেয়ে মাতলামি করবে রাস্তায়, তাই তোমাকে বেরোতে না বলছি,"। আমার ঠাকুরদাদার সময় কি মাদক দ্রব্য ছিল না? ঠাকুর দাদার সময় কি হিন্দু-মুসলিম ছিল না? ঠাকুরদাদার সময় কি কোনো পলেটিক্যাল পার্টি ছিল না ? মাথায় এল শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটো বানী-
"শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই পৃথিবীতে,
কিন্তু শিক্ষিত বিবেকের অনেক অভাব"।।
"বিদ্যা সহজ, শিক্ষা কঠিন,
Comments
Post a Comment